প্রিয় ফরিদপুর.কম

ফরিদপুর জেলার ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান >> সাতৈর মসজিদ, বোয়ালমারী

সাতৈর মসজিদ, বোয়ালমারী

সাতৈর মসজিদ, বোয়ালমারী

  • প্রতিষ্ঠা সালঃ আনুমানিক ৭০০ শত বছর আগে
  • ঠিকানাঃ সাতৈর, বোয়ালমারী, ফরিদপুর
  • যোগাযোগঃ

বাংলার নবাবদের স্থাপত্য শিল্পের একটি অনন্য নিদর্শন হলো সাতৈরের ঐতিহাসিক ৯ গম্বুজ বিশিষ্ট সাতৈর মসজিদ যা কালের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এর দৈর্ঘ্য ৬২ ফুট, প্রস্থ ৬২ ফুট, উচ্চতা এখনও সমতল ভূমি হতে ৩০ ফুট। ওয়ালের গাঁথুনি ৫.৫ ফুট। মাটির নীচে অদৃশ্য অবস্থায় আছে ১০ ফুট। আশ্চর্যজনক ঘটনা হচ্ছে এই মসজিদে কোন লোহা বা কাঠের বর্গা বা ভীম নেই।

সম্পূর্ন শূন্যের উপর ছাদ বা গম্বুজ কয়টি আজও অক্ষত অবস্থায় আছে। ফরিদপুর জেলার অধীন বোয়ালমারী থানার সাতৈর নামক স্থানে এই ঐতিহাসিক সাতৈর মসজিদ অবস্থিত। সাতৈর শাহী মসজিদের পাশ ঘেঁষেই রয়েছে ঐতিহাসিক গ্রান্ড ট্রাংক রোড বা শের শাহ সড়ক। কেউ কেউ মনে করেন সাতৈর শাহ মসজিদ শের শাহের আমলের কীর্তি। মসজিদটি সম্পর্কে অনেক কাহিনী এলাকায় প্রচলিত আছে। `শাহ-হে-তুর` একটি ফারসী শব্দ। এর অর্থ অলীর পাহাড়। তাই শাহ-হে-তুর শব্দ থেকে এই গ্রামের নাম করণ করা হয়েছে সাতৈর।

আনুমানিক সাতশত বছর পূর্বে এই গ্রামে বহু আউলিয়া দরবেশের বসবাস ছিল। মোঘল আমলে দিল্লীর বাদশাহ ছিলেন আলাউদ্দিন হুসাইন শাহ। আনুমানিক ১৫১৯ থেকে ১৫৩২ সালের মধ্যে সুলতান হুসাইন শাহের সুযোগ্য পুত্র নসরত শাহ এর সময় মসজিদটি তৈরী হয়েছিলো । সাতৈর গ্রামে বহু পীর আউলিয়া দরবেশের বসবাস ছিল। তার অনেক নির্দশন এখনও বিদ্যমান আছে। এসব পীর আউলিয়াগণ যথাক্রমে বাগদাদ ও ইয়েমেন হতে ধর্ম প্রচারের জন্য এখানে আগমন করে বলে অনেকের ধারনা। সাতৈর মসজিদটির নামকরণ করা হয়েছে সাতৈর শব্দ থেকে। ঐতিহাসিক বর্ণনা মতে সাতৈর স্থানটি বিখ্যাত দরবেশ শাহ সাইয়ীদ মাসুদ হককানী যিনি আলাউদ্দিন শাহের ধর্ম নির্দেশক ছিলেন। এই পথ প্রদর্শক দরবেশ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে ঘুরেছেন এবং তাঁর সম্মানে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। সময়ের পরিক্রমায় মসজিদটি ব্যবহৃত অবস্থা থেকে একটি জঙ্গলের ডিবিতে পরিনত হয়েছিলো। আট বছর পরে জঙ্গল পরিস্কার করে প্রশাসনিক ভাবে ইহার সংস্করণ ও মেরামত কাজ সম্পাদন করা হয়। স্থানীয় মতে মসজিদে একটি উৎকীর্ণ পাথর খন্ড ছিল। তবে ইহা মীরগঞ্জের প্রধান বহু আগে এনেছিলেন। আবার বলা হয় যে এটা ছিলো সাতৈর গ্রামের মুফতি সাহেবের। যার নাম ছিল খন্দকার আলী নকবী। তিনি ছিলেন রাজ দরবারের বিচারক।

তবে উল্লেখ্য ব্যক্তিবর্গের নিশ্চিত কোন ঐতিহাসিক তথ্য পাওয়া যায় না। মসজিদটি ০৯ (নয়) গম্বুজ বিশিষ্ট যা ভাটিয়াপাড়া মধুখালী রেললাইনের উপর ঘোষপুরের উত্তর পূর্বে সাতৈর বাজারের পূর্ব পাশে অবস্থিত। আয়তাকার ভূমি নকশায় ভিতরের পরিমাপ ১৩.৮০ বর্গ মিটার এবং এটি নয়টি গম্বুজ দ্বারা আবৃত। চারটি পাথরের স্তম্ভের উপর গম্বুজটি উদীয়মান এবং চারদিকে আরো বারোটি স্তম্ভ রয়েছে। তবে স্থাপত্যরীতি ও অলঙ্করনের দিক থেকে গম্বুজটি তাৎপর্যপূর্ন। কারণ এটি বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদের পিলার ও নির্মাণ অলঙ্করনে একইরুপ। বাইরের চার কোণায় চারটি বুরুজ রয়েছে। পাথর দ্বারা স্তম্ভগুলো যুক্ত রয়েছে। গম্বুজ খিলানগুলোতে এখনো কিছুটা সাদা রঙের আবছা আবৃত । পশ্চিম দিকের মিহরাবগুলোর ভিতরের প্রধান মিহারাবের দেয়ালে তিনটি নকশাকার অলংকরণে খিলান রয়েছে। মধ্যবর্তী মিহরাবটি বড়। পূর্ব দিকে তিনটি খিলানপথ দিয়ে অভ্যন্তরে প্রবেশ করা যায়। এছাড়া উত্তর ও দক্ষিণ দিকে তিনটি খিলান পথ রয়েছে। তবে বর্তমানে উত্তর ও দক্ষিনের প্রবেশ দ্বারগুলো জানালা হিসেবে রুপান্তরিত করা হয়েছে। বর্গাকার এই মসজিদটির মেঝে ঢালু হয়ে গেছে ৭৬ মিটার। দেখতে মনে হয় প্রবেশ পথগুলো ক্রমশ সরু হয়ে গেছে অর্থাৎ চোখের অসংগতিতে যে রকম দেখায়। ভেতরে এবং বাইরে সিমেন্ট প্লাস্টারে মেরামত করা হয়েছে। বাইরের দেয়ালেও সিমেন্ট প্লাস্টারে লাল রঙের মসৃণ আবরণ দেয়া হয়েছে। হাল আমলে সংস্কারের ফলে মসজিদটিকে আধুনিক মনে হলেও এটি বহু প্রাচীন আমলের একটি প্রত্ন সম্পদ এবং জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ মসজিদ। মসজিদের বিভিন্ন সংযোজন বা রুপান্তর করে মেরামত করা হলেও এর ভিতর ও বাইরের অধিকাংশ মূল আদল এখনও নষ্ট হয়নি।

Last updated at 1 year ago

www.priofaridpur.com


Thursday, 10th October 2024

© www.priofaridpur.com

Our Facebook Group

Email:-priofaridpur@gmail.com

This Application Developed by Visual Art