ফরিদপুর জেলায় শিক্ষা বিস্তার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
প্রাচীন শিক্ষাঃ
ফরিদপুরে প্রাচীন শিক্ষা বলতে মসজিদ ভিত্তিক ফোরকানিয়া মাদ্রাসা, টোল, খানকা, ভার্নাকুলার কওমী মাদ্রাসা ও আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে বুঝানো হয়েছে। ফরিদপুরে সংস্কৃত-টোল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কত ছিল তা সঠিক ভাবে জানা যায় না। তবে ১৯৬৬-১৯৬৭ সালে ফরিদপুর অঞ্চলে সংস্কৃত-টোল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিলো ৪ টি। এতে মোট ছাত্র-ছাত্রী ছিলো ৩২২ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ছিলো ৪৪ জন। এগুলো সরকারিভাবে এবং স্থানীয় প্রশাসনের আর্থিক সহযোগিতা ও পৃষ্টপোষকতায় পরিচালিত হতো। সরকার এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো গ্রান্ট দিয়ে থাকত। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে কাব্য, ব্যবকরণ, স্মৃতি, বেদান্ত প্রভূতি বিষয়ে শিক্ষা দান করা হতো।
১৮৬৭ সালে দেওবন্দ মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় দারুল উলূম মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো ভারতীয় উপমহাদেশে। এই মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার ২৭ বছর পর নাদওয়াতুল উলামা এবং ৩১ বছর পর দারুল উলূম লক্ষ্ণৌ প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দারুল উলূম মাদ্রাসার আদলে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। এ মাদ্রাসাগুলি কওমি মাদ্রাসা নামে পরিচিত।
দারুল উলূম দেওবন্দের অনুকরণে বাংলাদেশের যে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। তন্মধ্যে জামিয়া আরাবিয়া শামসুল উলুম মাদ্রাসা অন্যতম। ১৯৬৯ সালে মুফতি আবদুল কাদিরের নিরলস প্রচেষ্টায় ফরিদপুর শহরের পশ্চিম খাবাসপুর এলাকায় এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৭ এটি দাওরায়ে হাদিস (টাইটেল ) শ্রেণীতে উন্নীত হয়। এই মাদ্রাসায় কিতাব বিভাগ, হিফয বিভাগ, বিষয়ভিত্তিক তারবিয়াত ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ফাতওয়া ও ফারাইস প্রসঙ্গে ও কুতুব খানা।
দেশে প্রাথমিক শিক্ষার পটভূমিঃ
আধুনিক প্রাতিষ্ঠানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থার যে নেটওয়ার্ক বর্তমানে দেশব্যাপী দেখা যায় তা ইংরেজদেরই অবদান। তরাই প্রথম প্রাথমিক মাধ্যমিক কলেজীয় বিশ্ববিদ্যালয়িক অর্থাৎ এগিয়ে যাবার শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তনের নীতি গ্রহণ করে এবং বিদ্যালয়গুলিতে আর্থিক অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এই নীতি অনুসারেই প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। ইংরেজ নয়া প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করলেও তখন দেশীয় পদ্ধতিতে শিক্ষা অর্থাৎ পাঠশালা-টোল, মাদ্রাসা-মক্তব ও সংঘরাম ভিত্তিক শিক্ষাই ছিল প্রধান। ১৮৮১ সালে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নতি হলে ইন্টার কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষার দায়দায়িত্ব, নিয়ন্ত্রণ ও পশাসন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের হাতে অর্পন করা হয় এবং রাজস্বের সঙ্গে শিক্ষকদের বেতন ধার্য করার সুপারিশ করা হয়। ১৯১৯ সালে প্রাথমিক শিক্ষা আইন এবং ১৯৩০ সালে বঙ্গদেশ পল্লী প্রাথমিক শিক্ষা আইন চালু করা হলেও এই আইনের সুফল তেমন পাওয়া যায়নি। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ১৯৬০-৬১ সালে দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিচালনায় প্রাথমিক শিক্ষার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয় এবং শিক্ষা বিভাগ ও প্রাথমিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে থাকে। তখন ৫ম শ্রেণীর পাঠ শেষে বৃক্তি পরীক্ষা এবং ট্যালেন্ট স্কিম, বৃত্তিদানের ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়াও বিদ্যালয় শিক্ষকদের মহার্ভ ভাতা বৃদ্ধি, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কর্মসূচি এবং প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হলে জনগণের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে উৎসাহের সৃষ্টি হয় এবং ছাত্র সংখ্যাও বাড়তে থাকে। ১৯৮১ সালে প্রাথমিক মিক্ষা আইন এবং মহকুমা পর্যায়ে স্থানীয় শিক্ষা কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়েছে।
ফরিদপুর জেলার প্রাথমিক শিক্ষাঃ
১৯১৮ সালে নিন্দু ঠাকুর, হরিন্দ্র মিত্র এবং জয়নাল আবেদীন এর প্রচেষ্টায় বর্তমান হাজী শরীয়তুল্লাহ বাজারের পশ্চিম পাশে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়। স্কুলটি শুরুর প্রাক্কালে পৌরসভার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হতো। ১৯৭৩ সালে স্কুলটি জাতীয় করন করা হয় এবং গোয়ালচামট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে নাম করন করা হয়।
বর্তমান ফরিদপুর জেলায় প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে ১ টি প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট রয়েছে।
ফরিদপুর জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোর কার্যক্রম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে থাকে ।
ফরিদপুর জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৮৮৮ টি।
ফরিদপুর জেলায় বেসরকারিভাবে অনেক প্রাক-প্রাথমিক/প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে যেগুলো কিন্ডাগার্টেন নামে পরিচিত।
ফরিদপুর জেলায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষাঃ
ইংরেজ শাসন ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করার জন্য ১৮১৩ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে শাসকগোষ্ঠী প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন আনার প্রয়োজন অনুভব করতে থাকে। ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দের ৭ মার্চ এই পরিবর্তন আনার কথা ঘোষণা করেন বড়লাট লর্ড উইলিয়াম বেন্টিক। বড়লাট পরিষদের আইন সচিব টমাস বেকিংটন মেকলের সুপারিশ অনুযায়ী লর্ড বেন্টিক রাজপথে ও কোম্পানীর ব্যবসা -বানিজ্যে সহায়ক শক্তি হিসেবে একটি বিশেষ শিক্ষিত শ্রেণী গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন। বিট্রিশ সরকার ইংরেজিকে শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষা প্রবর্তনের এবং মেকলের সুপারিশ অনুসারে ইংরেজিকে রাষ্ট্রভাষা করার কথা ঘোষণা করেন। এতকাল পর্যন্ত ফারসি ছিল রাষ্ট্রভাষা। বেন্টিকের ঘোষনার পর রাষ্ট্রভাষা হয় ইংরেজি। রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার দাবির প্রেক্ষিতে তৎকালীণ বেঙ্গল প্রেসিডেন্টিতে সরকারি ইংরেজি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং সেই সিদ্ধান্ত অনুসারে বিভিন্ন জায়গায় ইংরেজি বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। ঐ সময় ভারতীয় মহাদেশে যে কয়টি বিদ্যালয় স্থাপন করা হয় তার মধ্যে ফরিদপুর জিলা স্কুল অন্যতম। ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে এই বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। ১৮৪০ থেকে ১৮৫৬ পর্যন্ত ফ্রাণকয়েম ও লেফেবরা নামে দুজন ইউরোপিয়ান এই স্কুলের শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৮৫১ সালে ফরিদপুরের তৎকালীন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ভগবান চন্দ্র বসু ও চন্দ্র মোহন মৈত্র ফরিদপুর শহরের বিদ্যানুরাগী ব্যক্তিবর্গের প্রচেষ্টায় ফরিদপুর উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। যেটি জিলা স্কুলের পাশেই অবস্থিত।
ফরিদপুর জেলায় মাধ্যমিক পর্যায়ে সরকারি বেসরকারি মিলে মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ২১৮ টি।
ফরিদপুর জেলায় সরকারি বেসরকারি মিলে উচ্চ মাধ্যমিক, ডিগ্রী ও অনার্স পর্যায়ের কলেজ রয়েছে ৪০ টিরও অধিক।
ফরিদপুর জেলায় দাখিল, আলিম ও ফাজিল পর্যায়ে মাদ্রাসা রয়েছে প্রায় ১০০ টি।
www.priofaridpur.com
Thursday, 21st November 2024