ফরিদপুর জেলার স্মরণীয় ব্যক্তিবর্গ >> পল্লী কবি জসীম উদদীন
পল্লী কবি জসীম উদদীন
- জন্ম সালঃ ১৯০৩ সাল
- জন্ম স্থানঃ ফরিদপুর সদর উপজেলার অম্বিকাপুর ইউনিয়নের তাম্বুলখানা গ্রামে
- মৃত্যু সালঃ ১৪ মার্চ ১৯৭৬ সাল
পল্লীর মাটি ও মানুষের কবি জসীম উদদীনের পিতামহ ছিলেন জমির উদ্দিন মোল্লা, পিতা-আনসার উদ্দিন মোল্লা, মাতা-আমিনা খাতুন। তিনি ফরিদপুর শহর থেকে ১২ মাইল দূরে তাম্বুলখানা গ্রামে নানা বাড়ী জন্মগ্রহণ করেন। প্রথমে কবি গোবিন্দপুর গ্রামের পাশে শোভারামপুর গ্রামে চৌধুরী বাড়ীতে অম্বিকা মাষ্টারের পাঠশালায় পড়ালেখা শুরু করেন। পরে ফরিদপুর হিতৈষী স্কুলে ভর্তি হন। এই স্কুলে কবির পিতা মরহুম মৌলবী আনসার উদ্দিন আহমেদ শিক্ষকতা করতেন।
চতুর্থ শ্রেনী পাশ করে কবি ফরিদপুর জিলা স্কুলে ভর্তি হন। কবি যখন নবম শ্রেণীর ছাত্র তখন অসহযোগ আন্দোলনের ধুম। স্কুল কলেজ ছেড়ে ছাত্ররা স্বাধীনতা আন্দোলনে নেমে পড়েছে। কবিও স্কুল ত্যাগ করে অনেক কষ্ট করে কলকাতায় গেলেন। কলকাতার কিশোর কবি নজরুল ইসলামের সাথে দেখা করেন। নজরুল ইসলামকে একটি কবিতার খাতাও দেখতে দেন। নজরুল আগ্রহ সহকারে খাতাটি নেন। নজরুলের যে কবিতাগুলো ভাল লেগেছিল সেগুলো দাগ দিয়ে দেন এবং এগুলোর নকল পাঠিয়ে দিতে বলেন। নজরুলের চেষ্টায় কবির কয়েকটি কবিতা কলকাতার মাসিক পত্রিকায় ছাপা হয়। দেশে ফিরে কবি আবার স্কুলে যেতে লাগলেন। নজরুলের কাছে তিনি কবিতা পাঠিয়ে সুদীর্ঘ পত্র লিখতেন। নজরুলের কাছ থেকে জবাবও পেতেন। কিছুদিন পরে মোসলেম ভারত পত্রিকার যে সংখ্যায় নজরুলের বিখ্যাত কবিতা বিদ্রোহী প্রকাশিত হয়েছিল সেই সংখ্যায় মিলন গান নামক জসিম উদদীনেরও একটি কবিতা ছাপা হয়েছিল। চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত সাধনা পত্রিকায়ও দুতিনটি কবিতা ছাপা হয়। এর সবকয়টা কবিতাই নজরুলের চেষ্টায় প্রকাশ পেয়েছিল। কবি ১৯২১ সালে ফরিদপুর জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্টিকুলেশন পাশ করেন। এরপর তিনি ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হন। কবির বিখ্যাত কবর কবিতাটি এসময়েই রচিত হয়েছে। এসময় কবি গ্রামের সাধারণ মানুষের সঙ্গে অন্তরঙ্গভাবে মিশে গেলেন। গ্রামের লোকদের সুখ দু:খের চিত্র তিনি তার কবিতায় ফুটিয়ে তুললেন। এরপর কলকাতায় ডা: শহীদুল্লাহর সঙ্গে কবির আলাপ হল। এরকিছুদিন পর কল্লোল পত্রিকায় তার ঐতিহাসিক কবর কবিতাটি ছাপা হলো। তারপর থেকে দেশের বড় বড় মাসিক পত্রিকা হতে তার লেখা চাওয়া হয়েছিল। তিনি ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ থেকে ১৯২৪ সালে আই.এ এবং ১৯২৯ সালে বি.এ পাশ করেন। ১৯৩১ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম এ পাশ করেন। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রামতনু লাহিড়ী কলেজে সহকারী গবেষক পদে যোগদান করেন ১৯৩৩ সালে। এরপর ১৯৩৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অধ্যাপনা শুরু করেন । এরপর তিনি ১৯৩৯ সালে মমতাজ বেগমকে বিয়ে করেন। তার ৪ ছেলে এবং ২ মেয়ে। কামাল আনোয়ার, ড. জামাল আনোয়ার, ফিরোজ আনোয়ার, খুরশীদ আনোয়ার, হাসনা মওদুদ ও আসমা তৌফিক। ছয় বছর অধ্যাপনা করার পর ১৯৪৪ সালে তৎকালীন ভারত সরকারের অধীন সরকারি চাকুরিতে যোগদান করেন। ১৯৬২ সালে সরকারি চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
১৯৬৮ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মনিত ডি.লিট উপাধি এবং ১৯৭৬ সালে একুশে পদক লাভ করেন। রাখালী কবির প্রথম কাব্য গ্রন্থ। জসীম উদদীন কবিতা, গান, ভ্রমন কাহিনী, স্মৃতি কথা, হাসির গল্প, গীতিনাট্য, রুপক নাট্য ইত্যাদি রচনা করেছেন। কবির অনেকগুলি বই ইংরেজী, ফারসী, চেক, আরবী, রুশ প্রভৃতি ভাষায় অনুদিত হয়ে বাংলা সাহিত্যকে বিশ্ববাসীর সম্মুখে তুলে ধরেছে। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাবলীর মধ্যে রয়েছে রাখালী, নকসী কাঁথার মাঠ, বালুচর, ধানক্ষেত, সোজন বাদিয়ার ঘাট, রঙিলা নায়ের মাঝি, এক পয়সার বাঁশী, চলো মুসাফির, হলদে পরীর দেশে, মাটির কান্না, বেদের মেয়ে, মধুমালা, ডালিমকুমার, পল্লী বধু, গাঙের পাড়, জীবন কথা, জারী গান, যে দেশে মানুষ বড়, বোবা কাহিনী ইত্যাদি ।
শহরের যান্ত্রিক জীবনের কোলাহল ছেড়ে যখনই তিমি অম্বিকাপুর নিজ গ্রামে আসতেন তখনই আবার আনন্দে মেতে উঠতেন। পল্লীকবি অম্বিকাপুরে আসলে এ গাঁও ওগাঁও গিয়ে পরিচিত সবার খোঁজ খবর রাখতেন। কবির আগমনে সমস্ত গ্রামে সাড়া পড়ে যেত। বিভিন্ন অভিযোগ এবং সমস্যা নিয়ে তারা আসতেন কবির কাছে। ১৯৭০ সালে কবি তার নিজ এলাকা অম্বিকাপুরে তাঁর পিতার নামে আনসার উদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করার পর তার জীবনের সর্বস্ব দিয়ে স্কুলটিকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছেন।
[ তথ্য সূত্র: ফরিদপুরের কবি সাহিত্যিক লেখক-আ.ন.ম আবদুস সোবহান, বৃহত্তর ফরিদপুরের ইতিহাস, মনোয়ার হোসেন সম্পাদিত ফরিদপুর গাইড]।
Last updated at 1 year ago
www.priofaridpur.com
Thursday, 21st November 2024