ফরিদপুর জেলার স্মরণীয় ব্যক্তিবর্গ >> ক্যাপ্টেন সিকান্দার আলী
ক্যাপ্টেন সিকান্দার আলী
- জন্ম সালঃ ১৯২৪ সাল
- জন্ম স্থানঃ রাজশাহী সারদা পুলিশ ট্রেনিং একাডেমী
- মৃত্যু সালঃ ১৯৭১ সাল
ক্যাপ্টেন সিকান্দার আলীর পিতা খান বাহাদুর রোকনউদ্দিন আহমেদ ছিলেন সারদা পুলিশ ট্রেনিং একাডেমীর একজন উধ্বতন কর্মকর্তা। মাতা ছিলেন রহিমা রোকন উদ্দিন। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তাঁর বাবা মায়ের তৃতীয় সন্তান ।
ক্যাপ্টেন সিকান্দার আলী ফরিদপুর জিলা স্কুল থেকে মেট্রিক এবং সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ থেকে আ.এ পাশ করেন। এরপর ১৯৪৬ সালে কোলকাতা ফ্লাইং ক্লাবে যোগদান করেন। তিনি ফ্লাইং ক্লাবের প্রথম ব্যাচের বৈমানিক ছাত্র ছিলেন। ১৯৪৮ সালে বৈমানিক হিসাবে কমিশন লাভ করেন ও কমার্শিয়াল পাইলটের লাইসেন্স পান। তারপর পাকিস্থান এয়ারফোর্সে যোগদান করেন। ১৯৫২ সালে জিডি পাইলট হিসাবে কমিশন পান এবং ১৯৬৪ সালে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট পদে বিমান বাহিনীর চাকরী থেকে অবসর নেন।
১৯৬৫ সালে ক্যাপ্টেন সিকান্দার আলী পাইলট হিসাবে আবার পাকিস্থান এয়ারফোর্সে যোগদান করেন। উন্নতর শিক্ষা গ্রহণের জন্য কানাডায় যান এবং চীফ সেক্টর পাইলট হিসাবে আবার পি. আই. এ তে ঢাকার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
কিশোর বয়সে গান শোনা, পাখি শিকার, বড়শি দিয়ে মাছ ধরা আর ছবি তোলার দুর্দান্ত নেশা ছিল তাঁর। সে সময় ফরিদপুরে ব্যক্তিগত ক্যামেরা, ফিল্ম ডেপলপ, ফটোএলার্জার, ডার্করুম শুধু তারই ছিলো। অনেকগুলি বন্দুক ছিল তাঁর সংগ্রহে। সেগুলো স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মুক্তি বাহিনীর কাজে লেগেছিলো। ফরিদপুর টেপাখোলা লেক থেকে ধানমন্ডি লেক সব খানেই তিনি বড়শি দিয়ে মাছ ধরতেন তিনি। সে সময় পাখি শিকারে কোন আইন ছিল না। তাই সময় পেলেই বেড়িয়ে পড়তেন পাখি শিকার করতে।
৬ই এপ্রিল ১৯৭১ সাল । দিনটি ছিল মঙ্গলবার। সেদিন তিনি তার ৬ নম্বর এলিফ্যান্ট রোডের ৩ তলার বাসায় বসে টিভিতে দেশের খবর দেখছিলেন। সময় ছিল সন্ধ্যা। তার পরনে ছিলে সাদা পাঞ্জাবি-পায়জামা আর পায়ে ছিল স্পঞ্জের স্যান্ডেল। হঠাৎ বাসার সামনে পাকিস্থান আর্মির একটা জীপ এসে হাজির হলো এবং তাঁর বাসার দরজায় কড়া নাড়লো গাড়ীতে আসা এক পাক আর্মি । তিনি সেই আর্মির সাথে বাসার নিচে নেমে গেলেন। কিছুক্ষন পর ফিরে এলেন এবং তখন তাকে খুবই মলিন দেখাচ্ছিল। তিনি তার বড় ছেলে এবং মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেরি না করে দ্রুত পাক আর্মিদের জীপে চলে যান। কিছুক্ষন পর তাঁর স্ত্রী সুলতানা বেগম তাঁর জন্য চা তৈরি করে নিয়ে আসেন এবং তাঁর জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। মিনিট, ঘন্টা, দিন, মাস, বছর পার হয়ে গেলেও তাঁর স্ত্রীর প্রতীক্ষা আর কখনই শেষ হয়নি।
১৯৭১ সালের ৬ ই এপ্রিল পাক সেনাবাহিনীর অফিসাররা তাকে ধরে নিয়ে যায় । তারপর আর তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি কোথাও।
তিনি ফরিদপুরের প্রথম মুসলিম বৈমানিক হিসাবে পরিচিত ছিলেন। তিনি ফরিদপুরের গর্ব।
Last updated at 1 month ago
www.priofaridpur.com
Thursday, 21st November 2024