ফরিদপুর জেলার স্মরণীয় ব্যক্তিবর্গ >> ডাঃ মোহাম্মদ জাহেদ
ডাঃ মোহাম্মদ জাহেদ
- জন্ম সালঃ ১৯২৮ সালের ১লা মার্চ
- জন্ম স্থানঃ ফরিদপুর সদর উপজেলাধীন আলিয়াবাদ ইউনিয়নের বিল মামুদপুর গ্রাম
- মৃত্যু সালঃ ১৯৯২ সালের ২ রা সেপ্টেম্বর
ব্যক্তি জীবনঃ
ডাঃ মোহাম্মদ জাহেদের জন্ম ১ লা মার্চ ১৯২৮ সালে ফরিদপুর শহরতলীর ঢোল সমুদ্র পাড়ে আলিয়াবাদ ইউনিয়নের বিলমামুদপুর গ্রামে। পিতা মোহাম্মদ ইছহাক ডাক বিভাগের পোষ্ট মাষ্টার ছিলেন। মাতা হুরমতুন নেসা গৃহিনী ছিলেন। আবদুস সালাম ও বদরউদ্দিন নামে আরও দুই ভাই এবং সুফিয়া বেগম নামে তাঁর এক বোন রয়েছে । তিনি ১৯৫২ সালের ২৫ এপ্রিল বিয়ে করেন। স্ত্রীর নাম ফাতেমা বেগম। সালাহউদ্দিন ফরিদ, মোহাম্মদ ফুয়াদ, নাসিরউদ্দিন মাহমুদ ও সাইফুদ্দিন মনা নামে ৪ জন পুত্র সন্তান এবং নাদিরা, মুনিরা ও হুমায়রা নামে ৩ জন কন্যা সন্তান রয়েছে।
শিক্ষা জীবনঃ
নিজগ্রাম আলিয়াবাদে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে ডাঃ মোহাম্মদ জাহেদ ১৯৪৪ সালে ফরিদপুর হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। তিনি ১৯৪৭ সালে রাজেন্দ্র কলেজ থেকে আইএসসি পাশ করেন। এরপর তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন ১৯৪৮ সালে । ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার পর দেখলেন যে সেখানে বাংলা নাটক নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে আন্দোলনে নামলেন এবং তাদের তীব্র আন্দোলনের ফলে ঢাকা মেডিকেল কলেজে প্রথম বাংলা নাটক মঞ্চস্থ করা শুরু হলো। আর এই আন্দোলনের মাধ্যমেই তিনি বাংলা ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন । আর তখন থেকেই ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। তিনি ছিলেন ভাষা আন্দোলনের একজন অগ্রসৈনিক । ১৯৫২-৫৩ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র/ছাত্রী সংসদের সহসভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৫৮ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন। চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি মওলানা ভাসানীর অনুপ্রেরণায় দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেন।
কর্মজীবনঃ
১৯৫৮ সালে চুয়াডাঙ্গা মহকুমা মেডিকেল অফিসার পদে সরকারি চাকুরিতে যোগদান করেন। ১৯৬০ সালে সরকারি চাকুরী ইস্তফা দিয়ে নিজ জেলা ফরিদপুরে ফিরে আসেন। ফরিদপুর শহরের চকবাজার স্ট্যান্ডার্ড ফার্মেসীতে, পরে আলীপুর ভাড়া বাসায় অতঃপর হরি গোবিন্দ সাহার টিনের ঘরে এবং সবশেষে আলীপুর বাসায় চেম্বার চেম্বার করে প্রাকটিস করেন। ডাক্তারী পেশার সাথে ব্যক্তিগত পর্যায়ে গরীব রোগীদের বিনামূল্যে ফ্রি স্যাম্পল প্রদানের কাজ চালিয়ে যান।
১৯৮০ সালে হাসান নামের এক চার বছরের শিশু কৃমির ঔষুধের অভাবে অন্ধ হয়ে যায়। বিষয়টি তাকে ভীষন বেদনা দেয়। এরপর তিনি ডাঃ ননী গোপাল সাহা, ডাঃ আব্দুর রাজ্জাক, ডাঃ আবদুস সালাম চৌধুরী, রকিব উদ্দীন আহমেদ, অধ্যাপক এম এ সামাদ, অধ্যাপক রবীন্দ্রনাথ সাহা, কামরুজ্জামান খান জাসু প্রমূখ ব্যক্তিদের সাথে নিয়ে এই বছরের ২রা মার্চ সানডে ফ্রি ক্লিনিক নামে একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন যা বর্তমানে একটি পূর্নাঙ্গ ডাঃ জাহেদ মেমোরিয়াল শিশু হাসপাতাল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে । ১৯৮০ সালের ২১ অক্টোবর বাংলাদেশ জাতীয় অন্ধকল্যাণ সমিতি ফরিদপুর জেলা শাখা প্রতিষ্ঠা করেন।
রেডক্রস সানডে ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করার পর ১৯৮১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর শিশু চিকিৎসা কেন্দ্রের নিজস্ব ভবন শিশু ভবন এর ভিত্তি স্থাপন করেন। এরপর ১৯৮২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর এই শিশু ভবনটি উদ্ধোধন করে তৎকালীন সামরিক শাসক লেফটেন্যান্ট জেনারেল এইচ এম এরশাদ।
এরপর তিনি ১৯৮৩ সালের ২৫ নভেম্বর বাংলাদেশ ডায়বেটিক সমিতি এর ফরিদপুর জেলা শাখা প্রতিষ্ঠা করেন।
১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ সরকার তার সমাজ কর্মের স্বীকৃতি স্বরুপ তাঁকে বাংলাদেশ জাতীয় সমাজ কল্যাণ পরিষদ পুরস্কার-১৯৮৮ প্রদান করে। এরপর ১৯৯৬ সালে জসীম ফাউন্ডেশন স্বর্ণপদক(মরণোত্তর) লাভ করেন। ১৯৯৯ সালে বিএমএ ফরিদপুর শাখা তাঁকে মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান করে।
ফরিদপুরে সমাজসেবায় তাঁর রয়েছে বিশাল অবদান। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চিকিৎসা পেশায় ও সমাজসেবায় নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। ফরিদপুরে স্বাস্থ্য ও সমাজ সেবায় বিশেষ ভূমিকা পালন করায় ফরিদপুর বাসী তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।
[তথ্য সূত্রঃ ২ রা সেপ্টেম্বর ২০০১ সালে অধ্যাপক এম এ সামাদের সম্পাদনায় প্রকাশিত ডাঃ মোহাম্মদ জাহেদ স্মারক গ্রন্থ ]
Last updated at 1 second ago
www.priofaridpur.com
Thursday, 21st November 2024