প্রিয় ফরিদপুর.কম

ফরিদপুর জেলার স্মরণীয় ব্যক্তিবর্গ >> ক্রীড়াবিদ আলাউদ্দিন খান

...

ক্রীড়াবিদ আলাউদ্দিন খান

  • জন্ম সালঃ ১৯১৬ সালের ১৯ শে জুলাই
  • জন্ম স্থানঃ ফরিদপুর শহরের আলীপুর
  • মৃত্যু সালঃ ২০০৪ সালের ১৯ জুন

কোলকাতা রিপন কলেজে আইন ও কোলকাতা ইউনিভারসিটিতে পোষ্ট গ্রাজুয়েট ক্লাসে অধ্যয়ন শুরু করেন। এ সময় কারমাইকেল হোষ্টেলে অবস্থান কালে হলওয়েল মনুমেন্ট ভাংগার আন্দোলন হয়। মরহুম ফজলুল কাদের চৌধুরী এ আন্দোলনে ছাত্র দলের নেতৃত্ব দান করেন। জনাব খান সক্রিয়ভাবে এ আন্দোলনে জড়িত ছিলেন। বৃটিশ সৈন্যদের গোলাগুলির মুখে আন্দোলন আরও তীব্রতর হয় ফলে বৃটিশ সরকার মনুমেন্টটি অপসারন করতে বাধ্য হয়। অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি চাকুরীর জন্য আবেদন করেন এবং ১৯৪১ সালের মাঝামঝি সময়ে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মনোনয়ন লাভ করেন এবং ঋণ শালিসী কমর্কর্তা পদে যোগদান করেন। ময়মনসিংহ জিলায় তার প্রথম পোষ্টিং হয় শেরপুর সার্কেলে। ঋণশালিসী কর্মকর্তা হিসেবে দুর্দশা গ্রস্ত ঋণভারে জর্জরিত এলাকার কৃষকদেরকে সাধ্যমত ঋণ মুক্তিতে সহয়তা করেন। এ সময়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে উদভুত মারাত্বক দুর্ভিক্ষে লক্ষ লক্ষ বাংলার মানুষ প্রাণ হারায়। এ দুর্দিনে বাজিতপুর সার্কেলের কাজের দায়িত্বের সাথে রিলিফের দায়িত্বও নিষ্ঠার সাথে পালন করেন। স্থানীয় দশজনকে সাথে করে এদুর্দিনে তিনি দুঃস্থাবাস ও লঙ্গরখানা চালু রাখেন। ধান চালের অভাব ঘটে। হু হু করে খ্যাদ্যের মূল্য বেড়ে জনগণের নাগালের বাইরে চলে যায় এবং পথে ঘাটে মানুষ মরতে থাকে। এ সময়ে জীবনের ঝুকি নিয়েও তিনি জনগনের খাদ্যের সন্ধানে সচেষ্ট থাকেন এবং বিশেষ সংবাদের ভিত্তিতে গভীর রাতে ২৫/৩০ জন চৌকিদার দফাদার ও ৩০/৪০ জন সমাজসেবী নিয়ে নৌকা বহর যোগে আসাম গামী এক বিরাট নৌকা বহরের প্রায় বার হাজার মন চাল আটক করেন। যা কালো বাজারীরা নৌকা-যোগে পাচার করছিল। উহা এলাকার দুঃস্থ জনগনের মধ্যে ন্যায্যমূল্যে দীর্ঘদিন বিলি করেন। আটককৃত চালের কিয়দাংশ দুর্ভিক্ষ পীড়িত অন্যান্য এলাকা সমূহেও বিলির ব্যবস্থা করেন। এ কর্তব্য নিষ্ঠার কারণেই তিনি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হন এবং ডিষ্ট্রিক ডেভলপমেন্ট অফিসার পদে উন্নীত হন।

 
ছাত্র জীবন থেকেই তিনি বৃটিশ বিরোধী ছিলেন। এখন স্বাধীনতা আন্দোলনে উহা তীব্রতর হয় এবং চূরান্তে তিনি ১৯৪৭ সালের প্রথমভাগে চাকুরী ইস্তফা দিয়ে মুসলিম লীগের কর্মি হিসেবে সিলেটে অনুষ্ঠিত রেফারেন্ডামে যোগদানে করেন এবং পরবর্তীতে পারিবারিক পেশা ব্যবসায়ে যোগদান করেন। অল্পদিনের মধ্যে ব্যবসায়ী হিসেবে নিজস্ব অবস্থান সংহত করে নেবার পর তিনি সক্রীয়ভাবে রাজনীতিতে ও সমাজ সেবামূলক কাজে জড়িয়ে পড়েন। বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের সাথে তার সম্পর্ক ছিল খুবই ঘনিষ্ট। ১৯৫২ সালে ফরিদপুর জেল থেকে শেখ মুজিব মুক্তি পেলে জনাব খান তাকে নিজ বাড়ীতে নিয়ে যান এবং আপন জনের মতন সেখানে কয়েকদিন মেহমানদারী করেন। সরকার বিরোধী রাজনীতির কারণে জনাব আলা্উদ্দিন খান বার বার জেল জুলুমের শিকার হন। বঞ্চিত, নির্যাতিত চর এলাকার প্রজাদের স্বার্থে তিনি আপোষহীন ভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের ন্যায্য দাবী আদায়ে সমর্থ হন। ফলশ্রুতিতে ফরিদপুর জেলা বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান হওয়া সত্বেও ষ্টিমার ও রেলের প্রথম শ্রেণীর স্থলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভ্রমন করে তিনি জন স্বার্থে জিলা বোর্ডের অর্থ সাশ্রয় করতে চেষ্টা করেছেন। আলীমুজ্জামান পুলের খাজনা তুলে দেবার ব্যাপারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
 
১৯৫৩ সালে ফরিদপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে সদস্য এবং পরে ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ফরিদপুর জমি বন্ধকী ব্যাংকের সদস্য, সহ-সভাপতি এবং পরবর্তীতে কয়েক বছর এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়াও তিনি তার দীর্ঘ জীবনে পৌরসভার সদস্য, স্কুল বোর্ডের সদস্য, পূর্ব পাকিস্থান ট্রেড আডভাইসরী বোর্ডের সদস্য ছিলেন। ফরিদপুর জেলা ব্যবসায়ী সমিতি, চকবাজার জামে মসজিদ, আলীপুর জামে মসজিদ, ঢাকাস্থ নাবিস্কো ডিষ্ট্রিবিউটার্স ইউনিয়ন, কোহিনুর কেমিক্যাল কোং ডিষ্ট্রিবিউটার্স এসোসিয়েশন, ফরিদপুর ঈদ কমিটি প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘদিন সেক্রেটারীর দায়িত্ব পালন করেন। তদুপরি ফরিদপুর চেম্বার অব কমার্সের ভাইস চেয়ারম্যান ও ফরিদপুর ক্রীড়া সংস্থার কোষাধক্ষ ছিলেন। পাকিস্তানের শেষ লগ্নে তিনি প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
 
স্কুল জীবন থেকেই ফরিদপুর লীগে খেলে(ফুলবল ও হকি) তিনি সম্ভাবনাময় কৃতি খেলোয়ার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। কলেজ জীবনে তিনি ফরিদপুর জেলার ক্রীড়া ক্ষেত্রে তার অবস্থান আরো সুদৃঢ় করেন। ফুটবলে জেলাদলের হয়ে কোলকাতা ময়দানে আই,এফ,এ শিল্ডে ও হকিতে বাইটন কাপ টুর্নামেন্টে খেলে কোলকাতা ক্রীড়া জগতেও একজন কৃতি খেলোয়ার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। যার ফলশ্রুতিতে তিনি হকিতে ১৯৩৮ সাল হতে ১৯৪১ সাল পর্যন্ত ইষ্ট বেঙ্গল ক্লাবে এবং ফুটবলে প্রথমে কমারটুলী ক্লাবে পরবর্তীতে ইষ্ট বেঙ্গল ক্লাবের পক্ষে খেলেন। অধিকন্ত ১৯৪০ সালে অল ইন্ডয়া ইন্টার ভারসিটি ফুটবল খেলায় কোলকাতা ইউনিভারসিটির পক্ষে খেলেন। খেলাধুলায় তার নিজস্ব স্টাইল ও বৈশিষ্ট ছিল যা আজো দর্শকবৃন্দের স্মৃতিপটে তাকে কিংবদন্তির নায়কে পরিণত করেছে। সে সময়ে এমন কোন পত্রিকা ছিল না যার খেলাধূলার কলামে আলাউদ্দিন খানের প্রশংসা ছিল না। এমন কি কতিপয় প্রধান দৈনিক এমনো মন্তব্য করেছিল যে, তিনি হকি অলিম্পিক দলে খেলার যোগ্যতা রাখেন। ১৯৩৩ সালে ফরিদপুর জিলা স্কুল দলের হয়ে প্রথম লীগে খেলার শুভ সূচনা করেন এবং দীর্ঘ ২০ বছর পর ১৯৫৩ সালে ফরিদপুর জিলা দলের অধিনায়ক হয়ে ঢাকায় অনুষ্ঠিত আন্তঃজেলা খেলায় যোগদান শেষে সক্রিয় খেলোয়াড় জীবনের ইতি টানেন।

Last updated at 1 second ago


www.priofaridpur.com


Friday, 10th May 2024

© www.priofaridpur.com

Our Facebook Group

Email:-priofaridpur@gmail.com

This Application Developed by Visual Art