প্রিয় ফরিদপুর.কম

ফরিদপুর জেলার ইতিহাস

বাংলায় পর্তুগীজ বনিকদের আগমনের সাথে ফতেহাবাদে জমিদারী প্রথা চালু হয় এবং তখন থেকেই একই সাথে এখানে ব্যবসা কেন্দ্র ও সেবা কেন্দ্র হিসেবে উন্নতি হতে থাকে। অনেক আউলিয়া দরবেশ এবং পুণ্যাত্নার আবাসভূমি হিসেবে এ অঞ্চল সুপ্রসিদ্ধ ছিল। জানা যায় প্রাচীন ঐতিহ্যের এই লীলাভূমি বহু জলা ও জঙ্গলে পরিপূর্ণ থাকায় সেসময় তেমন কেউই এ অঞ্চলকে আবাদ করার সাহস পায়নি। তখন ফতে আলী নামে একজন মুসলিম শাসক বহু পরিশ্রম ও কষ্টে এই অঞ্চলে মানুষ্য বসোবাসোপযোগী করে গড়ে তোলেন। ফলে তাঁর নাম অনুসারে এ অঞ্চলকে ফতেহাবাদ নামকরন করা হয়েছে। ফতে আলীর পুরো নাম হলো জালাল উদ্দিন ফতেহ শাহ। তিনি লক্ষ্মণাবতীর শাসক ছিলেন। এরপর আলাউদ্দিন হুসেইন শাহ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে ১৪৯৩ খ্রিস্টাব্দে ফতেহ শাহর নামানুসারে পূর্বের ধলেশ্বরী পরগণার নাম বদলিয়ে ফতেহাবাদ রাখেন। শুধু তাই নয় তিনি ফতেহাবাদকে বাংলার একটি প্রধান শহর হিসাবে গড়ে তোলেন। ভারতের পবিত্র ভূমি আজমীর শরীফের মহান সাধক এবং দরবেশ খাজা মাইনউদ্দিন চিশতি(রহঃ) এর শিষ্য শাহ ফরিদ (রহঃ) তৎকালীন সময়ে বর্তমান ফরিদপুর কালেক্টরেট সংলগ্ন স্থানে বহু পুরাতন একটা বটগাছের নিচে চিল্লা স্থাপন করেন। তখন সেই স্থানটি ছিল উন্মুক্ত এবং প্রাচীন বটগাছের ছায়া ঢাকা। আশে পাশে কোন স্থাপনা তখন তৈরি হয়নি । এই চিল্লা তথা বটগাছের নীচে বসে শাহ ফরিদ (রহঃ) ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান, ইসলামী জলসা, জিকির আযকার, হামদ, নাতের আসর বসাতেন। তিনি এই চিল্লা বা দরগায় বসে ধর্মীয় প্রচার প্রসার চালাতেন। লোকমুখে শোনা যায় এর বেশ কয়েক বছর পর পদ্মা নদী ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে একবার এই চিল্লা বা দরগার নিকট চলে আসে। পদ্মার ভাঙ্গন দেখে এ অঞ্চলের মানুষের মনে বিষাদের ছায়া নেমে আসে। তখন হাজার হাজার মানুষ আসেন শাহ ফরিদ (রহঃ) এর কাছে। তিনি সবাইকে নিয়ে মহান আল্লাহর দরবারে হাত তোলেন এই স্থান তথা দরগাটি যাতে পদ্মা নদীর সর্বনাশা ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পায়। তখন তাদের এই সম্মিলিত ফরিয়াদ মঞ্জর হয়েছিল। পদ্মার খরস্রোত স্থিমিত হয়ে চলে যায় এই দরগা থেকে ৭-৮ কিলোমিটার দূরে। এই দরগার পাদ প্রান্তেই গড়ে উঠেছে বর্তমান ফরিদপুর জেলা শহর। শাহ ফরিদের ইসলাম প্রচারের এই চিল্লা বা দরগা ইতিহাসের এক নীরব সাক্ষী হয়ে রয়েছে এবং এই মহান সাধকের নাম অনুসারে ফরিদপুর জেলার নামকরন করা হয়েছে। যদিও এই স্থানে সেই বটগাছটি এখন আর নেই। সেখানে বর্তমানে গড়ে তোলা হয়েছে তিন তলা বিশিষ্ট সুদৃশ্য মসজিদ। যেটি শাহ ফরিদ দরগা মসজিদ নামে পরিচিত।

পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রারম্ভিক পর্যায়ে ফরিদপুর শহরের উৎপত্তি হয় বলে ঐতিহাসিকগণ মনে করেন। এখানে মোঘল শাসনের সূত্রপাত ঘটে ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দে। ভূষণার নিকটবর্তী মথুরাপুরের বিজয় স্তম্ভ আজও মুঘলদের বৈভব ও শৌর্যের প্রতীক হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে। চকবাজার তখন শহরের ব্যবসা বানিজ্যের কেন্দ্র হিসাবে প্রতিষ্ঠা পায়। এই চকবাজার শব্দটিও মোঘল সূত্রে প্রাপ্ত। ধর্মীয় উদ্দেশ্যে গোয়ালচামট, খাবাসপুর, অম্বিকাপুর, হিন্দু আশ্রম, মঠ মন্দির গড়ে উঠে। ১৭৬০ খ্রিষ্টাব্দে ফরিদপুর অঞ্চলে ব্রিটিশ শাসকের ছোয়া লাগে। বিট্রিশরা তখন এ অঞ্চলের কৃষকদের উপর জুলম নির্যাতন শুরু করে। তাদের দিয়ে জোড় করে নীল চাষ শুরু করে। কৃষক, মজুর ও সাধারণ শ্রেণীর অধিকার আদায়ে ফরিদপুর জেলায় হাজী শরীয়তুল্লাহর নেতৃত্বে ফরায়েজী আন্দোলন ব্যাপক প্রসার লাভ করে। এ সময় গড়াই, মধুমতি, বারাসিয়া, চন্দনা, কুমার প্রভৃতি নদীর তীরবর্তী জমিতে নীলচাষ করা হত। আলফাডাঙ্গা ও মীরগঞ্জে প্রধান কুঠি স্থাপন করা হয়েছিল। জেলার ৫২ টি নীলকুঠি এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রধান ম্যানেজার ছিলেন ডানলফ। কৃষকদের দিয়ে জোড়পূর্বক নীল চাষ করানো হত। এতে কৃষকদের মধ্যে বিদ্রোহের দানা বেধেঁ ওঠে। অন্যান্য জেলার ন্যায় ফরিদপুর জেলাতেও নীল বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে। এর নেতৃত্ব দেন হাজী শরীয়তুল্লাহর ছেলে দুদু মিয়া।

১৮০০ শতাব্দীর শেষের দিকে এবং উনবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ফরিদপুর শহরে ইট পাথরের বিল্ডিং বা ভবনসমূহ স্থাপন করে ব্রিটিশ শাসকেরা তাদের নিজস্ব নক্সা অনুযায়ী । ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা জালালপুর হতে ফরিদপুর বিভক্ত হয়ে ফরিদপুর জেলা নামে অভিহিত করা হয়। যার হেডকোয়ার্টার করা হয় ফরিদপুর শহরে। ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে ফরিদপুর জেলা একজন সহকারী কালেক্টরের অধীনে একটি কালেক্টরেটের মর্যাদা লাভ করে। ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে যুগ্ম ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টরের সমন্বয়ে জেলাটি স্বাধীন ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থা ও রাজস্ব প্রশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে এ ব্যবস্থার বিলোপ ঘটে এবং একজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টরের অধীন ফরিদপুর জেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা শুরু হয়। ১৮৬৯ খ্রিস্টাব্দে ফরিদপুর পৌরসভা স্থাপিত হয়।  ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে স্থাপিত হয় কোর্ট বিল্ডিং। ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে ফরিদপুর রেল স্টেশন স্থাপন করা হয়। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে ২৫ একর জমিতে স্থাপন করা হয় ফরিদপুর পুলিশ লাইন। ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে শহরের কেন্দ্রীয় এলাকায় স্থাপিত হয় আযম মার্কেট বা বর্তমানের তিতুমীর বাজার।  ১৯৮৪ সালে ফরিদপুর জেলা ভেঙ্গে পাঁচটি জেলায় রুপান্তরিত হয়েছে। জেলাগুলো হচ্ছে ফরিদপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর। 

ফরিদপুর জেলার উত্তরে রাজবাড়ী এবং মানিকগঞ্জ জেলা, পশ্চিমে নড়াইল, মাগুরা, দক্ষিনে গোপালগঞ্জ জেলা, পূর্বে ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ এবং মাদারীপুর জেলা।

ফরিদপুর জেলারঃ

আয়তন ২০৫২.৮৬ কি.মি
উপজেলা  ৯ টি
পৌরসভা  ‍  ৬ টি
ইউনিয়ন ৮১ টি
মৌজা ১০২২ টি
গ্রাম ১৮৫৯ টি

মোট জনসংখ্যা (২০২২ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী)

২১৬২৮৭৬ জন

ফরিদপুর জেলার উপজেলাগুলো হচ্ছেঃ ফরিদপুর সদর উপজেলা, মধুখালী উপজেলা , বোয়ালমারী উপজেলা , আলফাডাঙ্গা উপজেলা , সালথা উপজেলা , নগরকান্দা ‍উপজেলা , ভাঙ্গা উপজেলা , সদরপুর উপজেলা এবং চরভদ্রাসন উপজেলা।

Print

মানচিত্রে ফরিদপুর জেলা

ফরিদপুর জেলার মানচিত্র

এক নজরেঃ এই ওয়েবসাইটে যেসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ফরিদপুর জেলা ব্রান্ডিং লোগো
ফরিদপুর জেলার ব্রান্ডিং পণ্যঃ পাট

সোনালী আঁশে ভরপুর ভালবাসি ফরিদপুর এই স্লোগানে সমৃদ্ধ বাংলাদেশের একটি অর্থনৈতিক গুরুতপূর্ণ পন্য পাট। এই পাটের অধিকাংশ চাহিদা সরবরাহ করা হয় ফরিদপুর জেলা থেকে। দেশের পাট উৎপাদনের সিংহভাগই ফরিদপুর জেলা থেকে হয়।

ফরিদপুর জেলার ঐতিহাসিক স্থানসমূহ
ফরিদপুর জেলার ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থানসমূহঃ

নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট, পল্লী কবি জসীম উদদীনের বাড়ী, পাতরাইল মসজিদ, মধুখালী চিনিকল, মথুরাপুর দেউল...

ফরিদপুর জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ
ফরিদপুর জেলার স্মরণীয় ব্যক্তিবর্গ

হাজী শরীয়তুল্লাহ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, নবাব আব্দুল লতিফ, পল্লী কবি জসীম উদদীন, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ, অম্বিকাচরণ মজুমদার, ইউসুফ আলী চৌধুরী, সৈয়দ আব্দুর রব....

ফরিদপুর জেলা
ফরিদপুর জেলার উপজেলাসমূহ

ফরিদপুর জেলায় ৯ টি উপজেলা রয়েছে । উপজেলাগুলো হলো- ফরিদপুর সদর উপজেলা, মধুখালী উপজেলা, বোয়ালমারী উপজেলা, আলফাডাঙ্গা উপজেলা, সালথা উপজেলা......

ফরিদপুর জেলার ফোন গাইড
ফরিদপুর জেলার ফোন গাইড

ফরিদপুর জেলার ডিজিটাল অনলাইন ভিত্তিক এই ফোন গাইডে আপনার প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা, প্রতিষ্ঠানের কাযক্রম এবং প্রতিষ্ঠানের ছবি সংযুক্ত করতে পারবেন। এই সেবাটি সম্পূর্ণ ফ্রি

ফরিদপুর জেলার ফোন গাইড
ফরিদপুর জেলার ফোন গাইড

ফরিদপুর জেলার ডিজিটাল অনলাইন ভিত্তিক এই ফোন গাইডে আপনার প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা, প্রতিষ্ঠানের কাযক্রম এবং প্রতিষ্ঠানের ছবি সংযুক্ত করতে পারবেন। এই সেবাটি সম্পূর্ণ ফ্রি

www.priofaridpur.com


Friday, 29th March 2024

© www.priofaridpur.com

Our Facebook Group

Email:-priofaridpur@gmail.com

This Application Developed by Visual Art